মঙ্গল কাব্যে নারী চরিত্র
ধর্মমঙ্গল: কাব্যখানি অর্বাচীন কালের ফসল। ‘ধর্ম” ঠাকুরের মাহাত্ম্য বর্ণনার উদ্দেশ্যে ‘ধর্মমঙ্গল” কাব্য রচিত। মধ্যযুগের কাব্যাকাশে ব্যতিক্রমী সৃষ্টি। ‘ধর্মমঙ্গল' কাব্যের প্রধান উপজীব্য বিষয় যুদ্ধ৷ এ কাব্যে সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলন, প্রীতি-মমতা-ভালোবাসা থাকলেও তা কিন্তু পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। যুদ্ধ-ই এ কাব্যের প্রাণকেন্দ্র। একাব্যের প্রতিটি নারী চরিত্র তাদের নিজস্ব ভাবনায় ভাস্বর। এরা প্রত্যেকে তাদের নিজ অধিকার আদায় করতে কখনো পুরুষকে, কখনো পুরুষশাসিত সমাজকে আবার কখনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজয় করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। এরা প্রত্যেকে বীরাঙ্গনা। ধর্মমঙ্গল কাব্য মধ্যে যে সমস্ত নারী চরিত্রের সন্ধান মেলে, তারা হল- ১) রঞ্জাবতী, ২)দূর্গা , ৩) নয়নী , ৪)
সুরিক্ষা, ৫) কলিঙ্গা , ৬) কানড়া,৭) লক্ষী ডোমমইনি এছাড়াও লাউসেনের আরও দুই স্ত্রী বিমলা এবং অমলা, জয়া, বিদ্যা, রসবতী, নীলা প্রমুখ পরিচয় মেলে।
১.
রঞ্জাবতী
:
রঞ্জাবতী ধর্মমঙ্গল কাব্যের প্রধান নারী চরিত্র। বৃদ্ধ রাজা কর্ণসেনের সঙ্গে রঞ্জাবতীর বিবাহ হয়েছিল। রঞ্জাবতীর পতিভক্তি বা দেবভক্তি মধ্যযুগের আরো পাঁচটি নারীচরিত্রের সমতুল্য। পুত্র কামনায় রঞ্জাবতী কঠোর সাধনা করেছে। দেবতার বরে রঞ্জাবতীর গর্ভে লাউসেনের জন্ম হয়েছে। রঞ্জাবতী সবসময় পুত্র লাউসেনকে মাতুল মাহুদ্যার হাত থেকে অতি যত্নে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
২.
দুর্গা
:
এই কাব্যে 'আখড়া পালা'য় দুর্গাকে গণিকারূপে দেখা যায়। দেবী দুর্গা লাউসেনকে পরীক্ষা করবার জন্যে গণিকাদের মতো অনেক ছলাকলায় মোহিত করবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পরে লাউসেনের সংযমে দেবী খুশি হলেন। নিজ বেশে দেখা দিয়ে লাউসেনকে আশীর্বাদ করলেন এবং বর দিলেন।
৩.
নয়ানী
:
কাব্যটির 'জামতি পালা'য় যে নারীটি প্রাধান্য পেয়েছে সে হল নয়ানী। নয়ানী জামতি নগরের এক গৃহবধূ। সে লাউসেনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। লাউসেনকে বিভিন্ন ছলাকলায় ভোলাতে চেয়েছে। লাউসেনের প্রত্যাখানে মিথ্যা অভিযোগ করেছে রাজার কাছে। যদিও শেষ পর্যন্ত নয়ানীর স্বরূপ সকলের সামনে প্রকট হয়ে পড়েছে। একটি খল কামুকা নারীর অসাধারণ চরিত্র হিসাবে নয়ানী উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র।
৪.
সুরিক্ষা
:
'গোলাহাট পালা'য় সুরিক্ষার প্রসঙ্গ রয়েছে। সে একজন উল্লেখযোগ্য গণিকা। তার বুদ্ধি, চাতুর্যে, ছলাকলায় সে অনেক পুরুষকে মোহিত করেছে। লাউসেন-এর প্রতি সুরিক্ষাও তার ছলাকলা বিস্তার করেছে। লাউসেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুরিক্ষা পরাজিত হলেও সে গুণবর্তী নয়ানীর তুলনায় সুরিক্ষা অধিক উজ্জ্বল।
৫.
কলিঙ্গা
:
লাউসেনের পাটরানী। যুদ্ধবিদ্যায় তার অসাধারণ দক্ষতা। মাহুদ্যা (মহামদ) ময়নাগড় আক্রমণ করলে কলিঙ্গা যুদ্ধযাত্রায় নেতৃত্ব দেয়। শত্রুসৈন্যর হাতে বন্দী হবার আগেই কলিঙ্গা আত্মহত্যা
করে।
৬.
কানড়া
:
কানড়া রণরঙ্গিণী দুঃসাহসী যুবতী, লাউসেনের পত্নী। কানড়ার বীরত্বে ও প্রেমের গাঢ়তায় লাউসেন কানড়াকে বিবাহ করেছে। মহামদের সঙ্গে যুদ্ধে কানড়ার বীরত্ব দেখবার মত। কানড়া উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র।
৭.
লক্ষ্মী
ডোমনী
:
কালু ডোমের স্ত্রী। বীরাঙ্গনা নারী। ময়নাগড় রক্ষার দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্মীর বীরত্ব স্বীকৃত হয়েছে। যুদ্ধে নিজের পুত্রদের পাঠাতেও দ্বিধা করেনি। এককথায় বীরত্বে, মাতার স্নেহে, পতিভক্তিতে লক্ষ্মী অসাধারণ চরিত্র।
এছাড়া গণিকা সুরিক্ষার পরিচারিকা গুরিক্ষা, বৃদ্ধা বেশ্যা ভাজন বুড়ীর চরিত্র কাব্যে রয়েছে।
Comments
Post a Comment