1. "বালকদের
পীড়ন
করিবার
জন্য
আমাদের
শিবনাথ
পন্ডিতের
একটি
অস্ত্র
ছিল,
সেটি
শুনিতে
যৎসামান্য
কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে
অত্যন্ত
নিদারুন।”
(i) শিবনাথ
পন্ডিত
কে?
বিশ্ববরেণ্য
সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'গিন্নি' গল্পে গল্পকথকের ছাত্রবৃত্তি ক্লাসের মাস্টার মহাশয় ছিলেন শিবনাথ পন্ডিত। কামানো দাড়ি-গোঁফ, ছাঁটা
চুল ও ছোটো টিকিতে
তাঁকে সাধারণ দেখতে হলেও তাঁকে দেখলেই
ছাত্রদের অন্তর ভয়ে শুকিয়ে যেত।
(ii) তাঁর
অস্ত্রটি
কী?
শিবনাথ পন্ডিত ছাত্রদের অদ্ভুত এবং হাস্যকর নামকরণ
করতেন যা ছাত্রদের কাছে
লজ্জার কারণ হয়ে উঠতো,
এটাই তাঁর অস্ত্র ছিল।
(iii) সেটি
প্রকৃতপক্ষে
নিদারুন
কেন?
নামকরণ একটি মানুষকে আলাদা
করে তোলে অন্য মানুষের
থেকে। একটি উপযুক্ত নাম
যেমন মানুষের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়
তেমনই অনুপযুক্ত নামের কারণে মানুষ লজ্জাবোধও করে। তাই অনেক
ক্ষেত্রেই বিকৃত নামকরণে বা ব্যঙ্গ করে
রাখা নামে মানুষ অপমানিত
হয় এবং মানসিক কষ্ট
পায়। শিবনাথ পন্ডিত ছাত্রদের বিকৃত নামকরণ করে তাদের মানসিক
কষ্ট দিয়ে মজা পেতেন,
সেই কারণেই তাঁর অস্ত্রটি নিদারুন
ছিল।
(iv) এখানে
কার
ওপর
অস্ত্রটি
প্রয়োগ
করা
হয়েছিল
এবং
তাতে
সেই
বালকের
কি
অবস্থা
হয়েছিল?
ছাত্রবৃত্তি
ক্লাসে গল্পকথকের সহপাঠী আশুর ওপর অস্ত্রটি
প্রয়োগ করা হয়েছিল। আশুর
গিন্নি নামকরণে যখন গোটা ক্লাস
হাসিতে মেতে উঠেছে তখন
শুরুতে আশু অল্প হেসে
তাতে যোগ দিয়ে নিজের
লজ্জা ঢাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু ক্লাস শেষে যখন বাড়ি
থেকে খাবার নিয়ে দাসী হাজির
হোলো তখন আশুর লজ্জা
বহুগুন বেড়ে গেছিলো। হাসতে
হাসতে তার কান-মুখ
লাল হয়ে উঠেছিল, কপালের
শিরা ফুলে উঠেছিল আর
চোখের জল অবাধ হয়ে
উঠেছিল। এক বৃষ্টিমুখর দুপুরে
ছোট বোনের সাথে খেলাটা তার
জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে
মনে হয়েছিল তার কাছে।
2.তাহাকে দেখিলেই
বালকদের
অন্তরাত্মা
শুকাইয়া
যাইত।'
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
লেখা
দুটি
গ্রন্থের
নাম
লেখ।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি গ্রন্থ
হল 'ঘরে-বাইরে' ও
'চতুরঙ্গ' | লখা দুটি গ্রন্থ
চল
খ) কাকে দেখলে
বালকদের
এমন
অবস্থা
হত
হতো?
উত্তরঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত' গিন্নি' গল্পের ছাত্রবৃত্তি ক্লাসের দুই তিন শ্রেণী
নিচের ক্লাসের কথকের পন্ডিত ছিলেন শিবনাথ। শিবনাথ
পন্ডিতকেদেখলে বালকদের অন্তরের আত্মা শুকিয়ে যেত।
গ) তার চেহারার হারার বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ গল্পের
কথকের ছাত্রবৃত্তি ক্লাসের দুই তিন শ্রেণীর নিচের ক্লাসের পন্ডিত ছিলেন শিবনাথ।
শিবনাথ পন্ডিতের গোঁফ দাড়ি কামানো,
চুল ছিল ছ ছাঁটা এবং টিকিটি ছিল ছোট।
ঘ) তার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ শিবনাথ
পন্ডিত কে দেখলে ছাত্রদের অন্তরের আত্মা শুকিয়ে যেত। তিনি ছাত্রদের উপর কিল চড় চাপড়
শিলা বৃষ্টির মতো মারতেন আবার তার মুখের তীব্র ভাষার জ্বালায় ছাত্রদের প্রাণ বের হয়ে
যেত। তিনি ছাত্রদের উপর অত্যাধিক মানসিক অত্যাচার
করতেন। ছাত্ররা তাকে শিক্ষকের সমান মর্যাদা আসনে বসাতে পারত না।
3)' তিনি আক্ষেপ করিতেন।,
ক) তিনি কি নিয়ে আক্ষেপ করতেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর রচিত 'গিন্নি' গল্পের পন্ডিত মহাশয় শিবনাথ পন্ডিত আক্ষেপ করতেন প্রাচীনকালের মতো গুরু ও শিষ্য সম্বন্ধ
এখন আর নেই। ছাত্ররা গুরুকে দেবতার মতো ভক্তি করে না ।
খ) আক্ষেপ করার ফল কি হতো?
উত্তরঃ শিবনাথ
পন্ডিত গুরু ও শিষ্য সম্বন্ধ নিযে আক্ষেপ করতেন। আবার ছাত্রদের মাথায় তার সামনে যা
থাকত ছুড়ে মারতেন এবং মাঝে মাঝে হুংকার দিয়ে উঠতেন কিন্তু তার মধ্যে এত খারাপ কথা থাকত
যে সেটাকে দেবতার বজ্র গর্জনের সাথে তুলনা চলে না।
গ)তার সম্পর্কে গল্পের কথক কি বলেছে?
উত্তরঃ তার
সম্পর্কে গল্পের কথক মনে করে যে শিবনাথ পন্ডিত দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র, চন্দ্র বা কার্তিক
নয় শুধু যমের সঙ্গে তার সাদৃশ্য দেখা যেত। ছাত্ররা
এবং গল্পের কথক মনে মনে কামনা করতেন যমের দুয়ারে অর্থাৎ মৃত্যুর দুয়ারে যেতে তিনি যেন
দেরি না করেন। ছাত্ররা তাকে কোনও দেবতার তুল্য বলে মনে করত না। একমাত্র যম দেবতার সঙ্গেই
তার সাদশ্য খুঁজে পেত।
ঘ) তার ছাত্র পীড়নের স্বরূপ প্রকাশ করো।
উত্তরঃ শিবনাথ
পন্ডিত ছাত্রদের উপর কিল চড় চাপড় এমন ভাবে আঘাত করতেন যাতে চারাগাছের বাগানের শিলা
বৃষ্টির মতো মনে হতো। কখনো সামনে যা পেতেন বালকদের মাথায় ছুড়ে মারতেন এবং মাঝে মাঝে
হুংকার দিয়ে উঠে খুব খারাপ কথা বলতেন তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন নামকরণ করে তাদের মানসিকভাবে
অত্যাচারিত করতেন।
4.“আমাদের পন্ডিত
মহাশয়ের
দুই
একত্রে
ছিল'-
“
ক)
'আমাদের'
বলতে
কাদের
কথা
বোঝানো
হয়েছে?
উত্তর।
লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছেলেবেলায় যে পাঠশালার শিক্ষার্থী
ছিলেন, উক্ত প্রশ্নে 'আমাদের'
বলতে সেই পাঠশালার ছাত্রদল
তথা লেখকের সহপাঠীদের কথা বোঝানো হয়েছে।
খ) পন্ডিত মহাশয়
কে?
উত্তর।
পাঠশালার তৃতীয় শ্রেণীর দ্বিতীয় বিভাগের শিক্ষক ছিলেন পন্ডিত শিবনাথ মহাশয়।
গ) কোন কোন বিষয় একত্রে ছিল?
উত্তর। লেখক
এবং বাকি ছাত্রদের মতে পন্ডিতমহাশয়ের হুল এবং দাঁত একত্রে ছিল। ছাত্রদের প্রতি তাঁর
আক্রমণাত্মক আচরণ এবং কটূক্তি ছাত্রদের মনে তাঁর প্রতি এইরূপ ধারণার সৃষ্টি করে। ছাত্ররা
তাঁকে হুল এবং দাঁত একত্রে বিশিষ্ট এক সাংঘাতিক প্রাণী রূপে বিবেচনা করত।
ঘ) একত্রে থাকার
ফলে
লেখককে
কী
ধরণের
অবস্থার
সম্মুখীন
হতে
হত?
উত্তর। একত্রে হুল এবং দাঁত বিশিষ্ট চরিত্রের অধিকারী শিক্ষকের অধীনে শিক্ষালাভ করায় যে প্রতি মুহূর্তে লেখককে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত সেকথা বলা বাহুল্য। ছাত্রদের উপর তাঁর প্রহার চলত বাগানে শিলাবৃষ্টি বর্ষণের ন্যায়, এবং বাচনভঙ্গি যেকোনো মানুষের সম্মানহানির জন্য যথেষ্ট।
5। 'এই যে
গিন্নি
আসছে।'-
ক)
উক্তিটির
বক্তা
কে?
উত্তর।
পাঠশালার শিবনাথ পন্ডিত উদ্ধৃতিটির বক্তা
খ) কাকে 'গিন্নি' বলা হয়েছে?
উত্তর। 'গিন্নি'
অর্থাৎ গদ্যের প্রধান চরিত্র হল লেখকের সহপাঠী আশু।
গ) কেন তাকে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে?
উত্তর। আশু
ছুটির দিনে তার সঙ্গিহীন ছোটো বোনের সাথে পুতুল খেলছিল, সেই কারণে শিবনাথ পন্ডিত তামাশা
করে আশুর নাম দিয়েছিলেন গিন্নি।
ঘ) এ ধরণের নামকরণের ফলে তার মনের অবস্থা
কেমন হয়েছিল?
উত্তর। পন্ডিত
মশাইয়ের এই ঠাট্টা ছোটো আশুর সরল মনে প্রশ্নের ঢেউ তুলেছিল। সামান্য এই কারণের জন্য
পন্ডিত মশাইয়ের এই বিদ্রুপে আশু অপমানিত হয়েছিল, তার সরল মনে এই ঠাট্টা গভীর আঁচর কেটেছিল।
6..'কিন্তু এটা বেশ বোঝা গিয়েছিল, নরদেবতার মত বালাই আর নাই'-
ক) 'বালাই' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর। রবীন্দ্রনাথ
লিখিত 'গিন্নি' গদ্যে লেখক 'বালাই' কথাটির দ্বারা অশুভ বা অমঙ্গলকে সুচিত করেছেন।
খ) নরদেবতা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর। গদ্যে
নরদেবতা বলতে বোঝানো হয়েছে শিবনাথ পন্ডিতের মতো সেই সকল ব্যক্তিদের যারা বল প্রয়োগের
নানা উপদ্রবের দ্বারা অপরকে নিজেদের দেবতা তুল্য সম্মান জ্ঞান করতে বাধ্য করে এবং একপ্রকার
জোর করেই তাদের উপর নিজেদের কল্পিত দেবমহিমা নিক্ষেপ করে।
গ) নরদেবতার মত বালাই নেই কেন?
উত্তর। লেখকের
মতে নরদেবতারা হলেন উচ্চাকাঙ্খী, তাঁরা কখনই সন্তুষ্টি লাভ করেন না, তিল থেকে তাল হলেও
তাঁরা মৃত্যুদণ্ড দিতে কুণ্ঠিত বোধ করেন না। তাঁদের চাহিদার অন্ত নেই এবং তিলমাত্র
ভুলকে মার্জনা না করে রক্তবর্ণ চোখে সব ভস্ব করে দেওয়ার মানসিকতার অধিকারী এই সমস্ত
নরদেবতাগণ।
ঘ) নরদেবতার সাথে কাদের তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর। সুরলোকবাসী দেবতা অর্থাৎ ঈশ্বর এর সাথে গদ্যে উল্লিখিত নরদেবতাদের তুলনা করা হয়েছে।
OR
'কিন্তু
এটা বেশ বুঝা গিয়েছিল
নরদেবতার মত বালাই আর
নেই।'
ক)
'নরদেবতা ' বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গিন্নি গল্পে'
নরদেবতা 'বলতে বোঝায় মানুষরূপী
দেবতা | এখানে ব্যঙ্গাত্মক
ভাবে
পন্ডিত মশাই কে নির্দেশ
করা হয়েছে।
খ) কোন প্রসঙ্গে কথাটি
বলা হয়েছে?
উত্তরঃ
শিবনাথ পন্ডিত ছাত্রদের উপর এত অকথ্য
অত্যাচার করত এবং তিনি
যে যে একজন একজন
শিক্ষক এবং তিনি যে
ছাত্রদের কাছে দেবতার সমান
মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য তাকে দেখে তাই
মনে হতো না। এই
প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে
গ) নরদেবতাকে 'বালাই 'বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ
শিক্ষক ছাত্রদের কাছে দেবতার সমান।
শিবনাথ পন্ডিত কে দেখে মনে
হতো না হতো না।
ছাত্রদের উপর সর্বদা অত্যাচার
করতেন। তাই এখানে শিক্ষক
শিবনাথ পন্ডিত ছাত্রদের কাছে দেবতা দেবতা
নন। তাই কথক নরদেবতার
বালাই বলেছেন অর্থাৎ শিক্ষক হয়েও তিনি ছাত্রদের
কাছে শিক্ষকের মর্যাদা পান না।
ঘ) নরদেবতার
নরদেবতার সম্পর্কে : গল্পকার আর কি কি কথা বলেছেন?
উত্তরঃ মর্তলোকে
নরদেবতাব আর দেখা পাওয়া যায় না কারণ মানব সমাজের এই নর দেবতা অনেক বেশি কিছু চান আর
তার না পেলে বা সামান্য ত্রুটি হলে চোখ লাল করে তারা করেন তখন তাদের আর দেবতা বলে মনে
হয় না।
7.' উক্ত
দেবালয়ে
গমন
করিতে
তিনি
যেন
আর
অধিক
বিলম্ব
না
করেন।'
ক) বক্তা কে?
সে
কাকে
এই
কথা
বলেছে?
উত্তরঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত' গিন্নি 'গল্পে গল্পের কথক তার স্কুলের
সহপাঠীদের এই কথা বলেছে।
খ) কখন এই
কথা
বলা
হয়েছে?
উত্তরঃশিবনাথ
পন্ডিত ছাত্রদের উপর এত অকথ্য
অত্যাচার করতেন তাদের নিপীড়ন ও পীড়ন করতেন
তখন কথকের মনে হতো তিনি
যেন উক্ত দেবালয় অর্থাৎ যমের কাছে যেতে দেরি
না করেন।
গ) বক্তা কেন এরূপ কামনা করতো?
উত্তরঃশিবনাথ
পন্ডিতের অত্যাচারে ছাত্রদের মনে অত্যাচারে হতো -তাকে গুরু বলে মেনে নেওয়া যায় না।
কারণ তিনি ছাত্রদের উপর অকথ্য গালিগালাজ করতেন এবং তাদের উপর কিল চড় চাপড় শিলাবৃষ্টির
মারতেন। তাই তিনি যাতে মৃত্যুর দুয়ারে অর্থাৎযমের দুয়ারে শীঘ্রই যেতে পারেন ছাত্ররা
মনে মনে এই কামনা করত। শিবনাম পন্ডিতের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে বক্তা এরূপ কামনা
করত।
ঘ) কথাটির মর্মার্থ লেখ।
উত্তরঃ উক্ত
দেবালয় বলতে যমের দেবালয়ের কথা বলা হয়েছে। শিবনাথ পন্ডিত যাতে দ্রুত যমের দেবালয়ের
উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারে তার ছাত্ররা মনে মনে চাইত। তারা তাকে গুরু নয় বা কোন দেবতা
দেবতা ইন্দ্র, ইন্দ্র চন্দ্র, বরুন ও কার্তিক নয় তিনি একজন সাক্ষাৎ যম বলে মনে করত।
যম হলো মৃত্যুর দেবতা, তাই শিবনাথ পন্ডিত যাতে তাড়াতাড়ি সেই যম দেবতার উদ্দেশ্যে
যাত্রা করতে পারে সেই কামনাই ছাত্ররা মনে মনে করতেন।
Comments
Post a Comment