আমাদের সঙ্গী
কুমুদরঞ্জন মল্লিক
গুটি ছয় পায়রা ও গুটিকত হাঁস রে, আমাদের ঘরে করে একসাথে বাস রে। আসে কাক এক ঝাঁক, করে খুব হাঁক ডাক। কোকিলের কনসার্ট শুনবি তো যাস রে।
- চলে দোয়েলের শিস, শালিকের গীত-ও, খঞ্জনা মাঝে মাঝে করে যায় নৃত্য। মাছরাঙা আসে যায়, লয়ে কাঠঠোকরায় চিলেরা ডাকে সব হরষিত চিত্ত।
দল বেঁধে টুনটুনি আসে হেথা চরতে, - বাবুইরা তালগাছে লাগে বাসা গড়তে। 'বেনেবুড়ি' মারে ডুব পুণ্যটা করে খুব, ফিঙে আসে বেছে বেছে শুঁয়োপোকা ধরতে।
(সংক্ষেপিত)
পাঠ-সহায়
কবি-পরিচিতি: কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ৩ মার্চ বর্ধমান জেলার জেলার কোগ্রাম নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বি. এ. পাশ করে "বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণ পদক” লাভ করেন। এরপর তিনি মাথরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন। খুব অল্প বয়সেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁকে বলা হয় "পল্লি কবি"। বাংলার পল্লি-প্রকৃতির সৌন্দর্য তিনি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করেন। তার অসাধারণ কাব্য প্রতিভার জন্য 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' লাভ করেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থগুলি হল-'বীথি', 'বনতুলসী', 'শতদল', 'উজানী', 'অজয়', 'বনমল্লিকা', 'একতারা 'স্বর্ণসন্ধ্যা', 'নূপুর', তুণির প্রভৃতি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর এই মহান কবির মৃত্যু হয়।
কবিতার মূলভাব: আমাদের পরিচিত কিছু পাখিকে নিয়ে কবিতাটি রচিত। পায়রা, হাঁস, কাক, কোকিল। প্রতিদিন কবির বাড়ির আশেপাশে আসে, খেলা করে, গান গায়। আর আসে দোয়েল, শালিক, খঞ্জনা, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা ও চিল। টুনটুনি ও বাবুইদের কথাও বাদ যায়নি কবিতায়। ফিঙে আর বেনেবুড়ির কথাও কবি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। কবি এদের সঙ্গী বলেছেন।
নামকরণ: কবিতাটি পাখিদের নিয়েই রচিত। এই পাখিগুলি আমাদের পরিবেশের অন্তর্গত। প্রতিদিন •এদের আমরা বাড়ির আশেপাশে দেখতে পাই। এদের নিজস্ব বৈশিষ্টকেও কবি বিশেষিত করেছেন। আমাদের ঘরের কাছের ও চেনা জানা বলে কবি এদের 'আমাদের সঙ্গী' বলেছেন।
শব্দার্থ: হাঁকডাক-ডাকাডাকি। কনসার্ট-নানা বাদ্য যন্ত্রের সম্মিলিত বাদন। শিস্-এখানে পাখির ডাককে বোঝানো হয়েছে। গীত-গান। খঞ্জনা-বাংলাদেশের অতি পরিচিত নাচিয়ে পাখি বিশেষ। নৃত্য-নাচ। হরষিত-আনন্দিত। চিত্ত-মন। চরতে-বিচরণ করতে। পুণ্য-পবিত্র।
অনুশীলনী
১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে ফাঁকা ঘরে টিক (✔) চিহ্ন দাও:
১.১ কবিতায় পায়রার সংখ্যা-
(গ) ছয় - কবিতার শুরুতেই বলা হয়েছে, "গুটি ছয় পায়রা ও গুটিকত হাঁস রে"।
১.২ কাক আসে-
(ক) একঝাঁক - কবিতায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, "আসে কাক একঝাঁক"।
১.৩ নাচ দেখায় এমন পাখিটি হল-
(গ) খঞ্জনা - কবিতায় বলা হয়েছে, "খঞ্জনা মাঝে মাঝে করে যায় নৃত্য"।
১.৪ শুঁয়োপোকা ধরতে আসে-
(খ) ফিঙে - কবিতায় বলা হয়েছে, "ফিঙে আসে বেছে বেছে শুঁয়োপোকা ধরতে"।
২। পাঠ থেকে শব্দ নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো:
চলে দোয়েলের শিস্, শালিকের গীত খঞ্জনা মাঝে মাঝে করে যায় নৃত্য। মাছরাঙা আসে যায়, লয়ে কাঠঠোকরায় চিলেরা ডাকে সব হরষিত চিত্ত।
৩। একটি বাক্যে উত্তর দাও:
(ক) কারা খুব হাঁকডাক করে?
কাকরা খুব হাঁকডাক করে।
(খ) কবির ঘরের কোন্ কোন্ পাখি বাস করে?
কবির ঘরে পায়রা, হাঁস এবং বাবুইরা বাস করে।
(গ) কারা কাঠঠোকরাকে নিয়ে আসে?
কেউ কাঠঠোকরাকে নিয়ে আসে না, কাঠঠোকরা নিজেই আসে।
(ঘ ) বেনেবুড়ি কী করে?
বেনেবুড়ি শুঁয়োপোকা ধরে।
ঙ) বাবুইরা কোথায় বাস তৈরি করে?
বাবুইরা তালগাছে বাসা গড়ে।
৪। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:
(ক) 'শুনবি তো যাসরে'- কবি কী শুনতে, কোথায় যেতে বলেছেন?
'শুনবি তো যাসরে'- কবি কোকিলের কনসার্ট শুনতে বলেছেন। কোথায় যাবেন, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।
(খ) বেনেবুড়ি আর ফিঙে কী করে?
বেনেবুড়ি ডুব মারে এবং ফিঙে শুঁয়োপোকা ধরে।
(গ) 'পুণ্যটা করে খুব।' কথাটির অর্থ কী?
'পুণ্যটা
করে খুব' - এই কথাটির অর্থ হল বেনেবুড়ি খুব ভালো কাজ করে, যেমন ডুব মারে।
(ঘ) কোকিলের ডাককে কনসাট বলা হয়েছে কেন?
কোকিলের ডাক খুব মধুর এবং মিষ্টি, যেমন একটি কনসার্টের সুর। তাই কোকিলের ডাককে কনসার্ট বলা হয়েছে।
(ঙ) টুনটুনি আর বাবুইরা কী করে?
টুনটুনি দল বেঁধে চরতে আসে এবং বাবুইরা তালগাছে বাসা গড়ে।
৫। রচনাধর্মী প্রশ্ন:
(ক) 'আমাদের সঙ্গী' কবিতায় কোন্ কোন্ পাখির কথা বলা হয়েছে? তাদের আচরণ ও কার্যকলাপ উল্লেখ করো।
কবিতায় বিভিন্ন পাখির কথা বলা হয়েছে, যেমন: পায়রা, হাঁস, কাক, কোকিল, দোয়েল, শালিক, খঞ্জনা, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, চিল, টুনটুনি, বাবুই, ফিঙে, বেনেবুড়ি। এই পাখিগুলি কবির বাড়ির আশেপাশে বিচরণ করে, গান গায়, নাচে, খাবার খুঁজে, বাসা বানায় ইত্যাদি।
(খ) কবি কাদের সঙ্গী বলেছেন এবং কেন?
কবি এই সব পাখিকে তার সঙ্গী বলেছেন কারণ এই পাখিগুলি প্রতিদিন তার বাড়ির আশেপাশে আসে, তার পরিচিত। তিনি এই পাখিদের আচরণ, গান, নাচ দেখে খুশি হন। এই পাখিগুলি তার একাকীতাকে দূর করে এবং তার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে।
(গ) কবিতায় যেসব পাখির কথা আছে, সেগুলি ছাড়া তুমি আরও পাঁচটি পাখির নাম লেখো এবং তাদের আচরণ উল্লেখ করো।
কবিতায় উল্লেখিত পাখি ছাড়াও আরও অনেক পাখি আছে। নিচে পাঁচটি পাখির নাম এবং তাদের আচরণ উল্লেখ করা হলো:
কোয়ল: কোয়ল গাছের ফাঁকে বাসা বাঁধে এবং মিষ্টি স্বরে গান গায়।
ময়ূর: ময়ূর তার সুন্দর পালকের জন্য পরিচিত। এরা নাচে এবং জমিতে খাবার খুঁজে।
কাকতুয়া: কাকতুয়া খুব চটপটে এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দ বের করতে পারে।
শালিক: শালিক খুব চালাক পাখি। এরা অন্য পাখির ডিম চুরি করে খায়।
চড়ুই: চড়ুই খুব ছোট পাখি। এরা দলে দলে ঘুরে বেড়ায় এবং খুব সরব।
(ঘ) 'বেনেবুড়ি মারে ডুব'- কোথায় ডুব মারে? কেন মারে লেখো।
বেনেবুড়ি সম্ভবত পানিতে ডুব মারে। সে পানির নিচে খাবার, যেমন শুঁয়োপোকা খুঁজতে ডুব মারে। কবিতায় বলা হয়েছে, "বেনেবুড়ি মারে ডুব পুণ্যটা করে খুব, ফিঙে আসে বেছে বেছে শুঁয়োপোকা ধরতে।" এর অর্থ হল বেনেবুড়ি ডুব মারার মাধ্যমে নিজের এবং অন্য পাখিদের জন্য খাবার জোগাড় করে।
৬। নীচের শব্দগুলির অর্থ লেখো:
· গুটিকত: এই শব্দটি খুব সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় না। সম্ভবত এখানে 'গুটি' শব্দটির সঙ্গে 'কত' শব্দটি যুক্ত হয়ে একটি বিশেষণ বা ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হতে পারে খুব ছোট, ক্ষুদ্র, বা ক্ষীণ স্বরে।
উদাহরণ: গুটিকত হাঁস - খুব ছোট বা ক্ষুদ্র হাঁস
· হরষিত: এই শব্দের অর্থ হল আনন্দিত, উল্লাসিত বা খুশি।
উদাহরণ: চিলেরা ডাকে সব হরষিত চিত্ত - চিলেরা খুব আনন্দে ডাকছে।
· গড়তে: এই শব্দের অর্থ হল তৈরি করা, নির্মাণ করা বা বানানো।
উদাহরণ: বাবুইরা তালগাছে লাগে বাসা গড়তে - বাবুইরা তালগাছে বাসা বানাচ্ছে।
· চিত্ত: এই শব্দের অর্থ হল মন, হৃদয় বা অন্তর।
উদাহরণ: চিলেরা ডাকে সব হরষিত চিত্ত - চিলেরা খুব আনন্দে মনে ডাকছে।
৭। নীচের শব্দগুলির বিপরীত অর্থ লেখো:
· আসে: যায়, চলে যায়
· ঘরে: বাইরে, বহির্ভূত
· দল: একাকী, একা
· পুণ্য: পাপ, অপরাধ
·
হেথা: সেখানে, ওখানে
৮। নীচের শব্দগুলির গদ্যরূপ লেখো:
লয়ে, নিয়ে,
ধরে, সাথে, সঙ্গে করে
চিত্ত, মন,
হৃদয়, অন্তর
মারে ডুব, পানিতে ডুব দেয়, পানির নিচে যায়
হেথা, লাগে।
এখানে
৯। নীচের শব্দগুলি দিয়ে বাক্য রচনা করো:
· হাঁকডাক:কাকরা সারা দিন হাঁকডাক করে।
· নৃত্য:ময়ূর তার সুন্দর পালক নিয়ে নৃত্য করে।
· শিস্:শিশের শব্দ শুনে আমি ঘুম থেকে উঠে গেলাম।
· কনসার্ট:কোকিলের ডাক শুনে মনে হয় একটা কনসার্ট চলছে।
· পুণ্য:বেনেবুড়ি ডুব মারে, পুণ্য কাজ করে।
১১। নীচের শব্দগুলির সমার্থক শব্দ লেখো: (একটি করে)
· গীত: গান, ধ্বনি, সুর, রাগ, কীর্তন, ভজন
· চিত্ত: মন, হৃদয়, অন্তর, চেতনা, মনস্ক
· লয়: তাল, ছন্দ, ধ্বনি, সুর, গতি
· পুণ্য: সুকৃতি, সৎকর্ম, ধর্ম, পবিত্রতা, মঙ্গল

Comments
Post a Comment